যখন তখন বন্ধ হয়ে যায় ঢাবির লিফট। দিনের পর দিন এ ঘটনা ঘটে চললেও কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। লিফট বন্ধ হয়ে লিফটের ভেতর শিক্ষার্থীদের অজ্ঞান হয়ে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। এমনকি লিফট দুর্ঘটনায় নিহত হওয়ার উদাহরণও রয়েছে ঢাবিতে। তারপরও কর্তৃপক্ষের এমন উদাসীনতা সবাইকে হতবাক করেছে। কারণ শিক্ষার্থীরা এর প্রতিকারের জন্য প্রশাসনের প্রায় সর্বত্রই ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু মন গলেনি কারও। এতে হতাশ শিক্ষার্থীরা মন্তব্য করছেন ‘কোনো কিছুতে লাশ না পড়া পর্যন্ত… এ বিশ্ববিদ্যালয়ের টনক নড়ে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা ভবনের লিফট চলন্ত অবস্থায় বন্ধ হয়ে যাওয়া কোনো নতুন ঘটনা নয়। বরং এখন এটি নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। কিন্তু দফায় দফায় স্মারকলিপি পেশ ও অভিযোগ জানানোর পরও শিক্ষার্থীরা পাননি এর কোনো স্থায়ী সমাধান।
প্রশাসন বলছে নতুন করে লিফটের জন্য বাজেট না থাকায় এখন নতুন লিফট বসানোও কঠিন। অন্যদিকে শিক্ষকদের জন্য ব্যবহৃত লিফটে উঠতে চাইলে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের।
বৃহস্পতিবার সকালে আবারও কলাভবনের একটি লিফটে দশ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে আটকে ছিলেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। পরবর্তী সময়ে লিফটম্যান ও নিরাপত্তা কর্মীরা এসে তাদের উদ্ধার করেন। এর আগে গত ২৭ এপ্রিল কলাভবনের একটি লিফটে ২৬ জন শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ মিনিট আটকা ছিলেন। এ ঘটনায় সুফিয়া কামাল হলের তানিয়া আক্তার নামের চতুর্থ বর্ষের এক শিক্ষার্থী অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
শুধু কলা ভবনই নয়, বিভিন্ন হলের লিফটগুলোও প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মোকারম ভবনের ম্যানুয়াল কার্গো লিফটে উঠতে গিয়ে নিচে পড়ে চারুকলা অনুষদের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (হিসাব) মো. আবদুল্লাহর মৃত্যু হয়েছে।
কলা ভবনের লিফটের এমন দুরবস্থা দেখে বেশ কয়েক দফায় শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ স্মারকলিপি পেশ করেও কোনো স্থায়ী সমাধান পাননি।
গতকাল লিফটে আটকেপড়া এক শিক্ষার্থী জানান, সকালবেলা নয়জন শিক্ষার্থী লিফটে উঠলে সেটি দুই ও তিন তলার মাঝখানে আটকে যায়। কিছুক্ষণ পর সাইরেন বাজতে শুরু করে, বাতাস বন্ধ হয়ে যায় ও লাইট বারবার নিভে যায়। পরে লিফটম্যান এসে তাদের উদ্ধার করেন।
মো. আকাশ শাহ নামের এক ঢাবি শিক্ষার্থী সামাজিকমাধ্যমে লিফটে আটকে পড়া শিক্ষার্থীদের ছবি শেয়ার করে বলেন, এই লিফটির জন্য টানা ৪ মাস ডিন থেকে প্রক্টর, প্রক্টর থেকে ভিসি- এমন কোনো দুয়ার নেই যেখানে যাইনি। দিনের পর দিন সবার দুয়ারে গেছি। সামান্য একটা বাজেটের বিষয় কিন্তু কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দেয়নি। তারা লিফটটি পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগই নেননি। হাল্কা একটু মেরামত করে আবার চালিয়ে দেন। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লাশ দেখার আগ পর্যন্ত কোনো বিষয়ে টনক নড়ে না।
কলা ভবনের এক নিরাপত্তাকর্মী সূত্রে জানা যায়, লিফটগুলো অনেক পুরোনো হওয়ায় মাঝেমধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। কিছু দিন আগে ঠিক করা হলেও এখন আগের মতোই অবস্থা।
অন্যদিকে কলা অনুষদের এক শিক্ষার্থী ফারিহা আফরোজ রিমি অভিযোগ জানিয়ে বলেন, শিক্ষকদের লিফট ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও আমাদের লিফটে উঠতে দেওয়া হয় না। সকালে শিক্ষকদের লিফটে একজন শিক্ষক ছিলেন। শুধু আমরা দুজন উঠতে চাইলে তিনি আমাদের বাধা দেন। বলেন এটায় নাকি উঠা যাবে না।
এই বিষয়ে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক এবি জুবায়ের বলেন, কলাভবনের লিফটের সমস্যা নিয়ে ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম প্রশাসনকে কনসার্ন জানিয়েছেন। প্রোভিসি, ট্রেজারার, ইঞ্জনিয়ারিং সেকশনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। এর ভিত্তিতে একটি কমিটিও গঠিত হয়েছে। কমিটি এই মুহূর্তে সরেজমিন ভিজিট করেছে। আশা করি, কলাভবনের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান হতে যাচ্ছে শিগগিরই।
ডাকসু জিএস এস এম ফরহাদ বলেন, কলা ভবনের লিফট পরিবর্তন ও ত্রুটিপূর্ণ লিফটগুলোর তদারকি আমাদের অন্যতম দাবি ছিল। তিনি জানান, বাজেট না থাকায় এখনও উদ্যোগ নেওয়া যায়নি, তবে প্রশাসন বাজেট দিলে নতুন লিফট স্থাপন করা হবে, না দিলে প্রশাসনকে বাধ্য করা হবে।
সার্বিক বিষয় নিয়ে কলা অনুষদের (ভারপ্রাপ্ত) ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, এই বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছি। আজকে (বৃহস্পতিবার) লিফট আটকে যাওয়ার ঘটনার পরপরই ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশন ও লিফট কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, নির্ধারিত ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি মানুষ লিফটে উঠলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে।
লিফট সমস্যার স্থায়ী সমাধান প্রসঙ্গে তিনি জানান, যে লিফটগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে, সেগুলো অনেক দামি। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা বাজেট না পেলে নতুন লিফট স্থাপন করা কঠিন। তবে কলাভবনের মাঝের লিফটে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়, তাই আমরা সেটি এক্সচেঞ্জের কথা ভাবছি।
শিক্ষকদের লিফট ব্যবহারে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সব শিক্ষকের মানসিকতা এক নয়। আমি যখন লিফটে যাই, শিক্ষার্থীদেরও সঙ্গে নিতে বলি। আসলে শিক্ষকদের লিফটও খুব ভালো অবস্থায় নেই, সেটিও মাঝেমধ্যে আটকে যায়।