২৪ জুলাই বিপ্লবের পীরগাছার প্রথমসারির অন্যতম সৈনিক সাইফ রাফিদ (২২) মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার দিকে ঢাকার নতুনবাজার এলাকায় লিফট দুর্ঘটনায় মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সাইফ রাফিদ পীরগাছা সদর ইউনিয়নের মাস্টারপাড়া গ্রামের মৃত আসাদুজ্জামান বাদলের একমাত্র সন্তান।
রাফিদ ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন। তার বাবা আসাদুজ্জামান বাদল গত ৬ মার্চ এবং তার মা ২০২৩ সালের ১৪ এপ্রিলে ইন্তেকাল করেন।
সবার পরিচিত সাইফ রাফিদ পীরগাছা জেএন হাইস্কুলের ২০১৮ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুতে পীরগাছায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার দীর্ঘদিনের বন্ধু, সহপাঠী ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা সোশ্যাল মিডিয়ায় তার রেখে যাওয়া স্মৃতি স্মরণ করে বিভিন্ন ধরনের আবেগঘন পোস্ট করছেন।
শেখ শোভন লেখেন- ‘জুলাইয়ের লড়াকু বীরযোদ্ধা তারুণ্যের প্রতিচ্ছায়া স্নেহের রাফিদ, তোমার বিদায়ে আমরা শোকাহত এবং একই সঙ্গে নয়া সমাজ বিপ্লবের পথে বৈষম্যহীনতার চেতনাবাহক তরুণ সমাজের নিকট দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ। দুনিয়ার সীমানা পেরিয়ে অনন্তে বাঁচো।’
বেলাল নামে একজন লেখেন- ‘মাত্র দুই বছরের মধ্যেই একটি পরিবারের সমাপ্তি! প্রথমেই মা এরপর বাবা এবং গতকাল রাতে তাদের একমাত্র ছেলে আমাদের সকলের প্রিয় ছোট ভাই সাইফ রাফিদ। আল্লাহ সবাইকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুক।’
আরেকজন লেখেন- ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের দিনগুলোতে পীরগাছায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিল সাইফ রাফিদ। তবে তাকে ক্রেডিট নিতে দেখিনি। বেশ তেজদীপ্ত ছেলে ছিল। কখনো পাবলিসিটি চায়নি।’
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী ফরহাদ হোসেন বিপ্লব লেখেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে রিসার্চ মেথডলজি কোর্সের ফিল্ডওয়ার্ক নিয়ে খুব ব্যস্ত সময় কাটছিল। একের পর এক কাজ, ক্লাস, প্রস্তুতি— সব মিলিয়ে শরীর–মনে চাপ ছিল। গতকালও সারা দিন ক্লাশ করে ব্যানার প্রিন্টের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরি সন্ধ্যা ছয়–সাতটার দিকে। বাসায় এসেই শুনলাম বুয়া খুব অসুস্থ। তাড়াহুড়ো করে তার বাসায় গিয়ে দেখে আসি।
ফিরে এসে দেখি বাংলাদেশ-ভারতের খেলা চলছে। রাফিদ আর বন্ধুদের সঙ্গে খেলা দেখতে দেখতে মিঠুনের রিপোর্টের কাজ করছিলাম। আমরা জিতলাম, খেলা শেষে নেমে ক্যাশ আউট করতে যাই। ঠিক তখনই শুনলাম বুয়া মারা গেছেন। খবরটা শুনে প্রচণ্ড খারাপ লাগল। তিনি আমাকে আর আমার স্ত্রীকে খুব আদর করতেন।
তারপর আবার রিপোর্টের কাজে বসি। কাজ করতে রাত প্রায় ১টা বেজে যায়। এদিকে রাফিদ, প্রতীক, প্রিয়ম ছাদে ছিল। ঘুমোতে যাওয়ার আগে মিঠুনকে বললাম রাফিদকে ডেকে নিচে আনতে। কথাটা শেষ হতেই হঠাৎ বিকট একটা শব্দ শুনি। দৌড়ে গিয়ে দেখি প্রতীকের অস্থির অবস্থা। নিচে গিয়ে দেখি রাফিদের কোনো নড়াচড়া নেই। পড়ে আছে লিফটের গ্যাপে। সঙ্গে সঙ্গে রিকশা নিয়ে প্রথমে ফরাজি হাসপাতালে পাঠাই প্রতীক আর হৃদয়কে দিয়ে। আমি আর মিঠুন তাদের পেছনে যাই।
ফরাজি থেকে দ্রুত ঢামেকে রেফার করা হয়। ঢামেকে পৌঁছার সঙ্গেই আবারও রেফার করা হয় নিটারে। সেখানে গিয়ে ডাক্তার জানালেন—রাফিদ আর নেই।
সব কিছু এত দ্রুত ঘটেছে যে এখনো বোঝার মতো শক্তি নেই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাফিদকে হারিয়ে ফেললাম! আহ এই কষ্ট নেয়ার মতো না।’