:: হাজী মোঃ আমিনুল ইসলাম ::
আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৫৪তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। বীরের জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার দিন। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন ভূখণ্ডের নাম জানান দেওয়ার দিন।
৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল। আজকের দিনটিতে বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। রাজধানী ঢাকা থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত নানা আয়োজনে উদযাপিত হবে দিনটি।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম বিজয় দিবস। এই দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। দেশবাসীকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তারা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদের আত্মত্যাগের কথা, যাদের ত্যাগের বিনিময়ে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব হয়েছিল।
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে মনে পড়ে যায় সেইসব স্মৃতি, যা নাকি আমাদের শুধু গর্ব করতেই শেখায় না, বরং বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে আত্মমর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শেখায়। ৩০ লাখ শহীদের রক্তে স্নাত, দুই লাখ নারীর সম্ভ্রম এবং কোটি কোটি মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের এই বিজয়।
ভারত-পাকিস্তান বিভক্তির পর থেকে মুক্তিযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত আমরা প্রত্যক্ষ করেছি পূর্ব বাংলার মানুষের প্রতি পাকিস্তান আমলের শোষণ-বঞ্চনার ঘটনাবলি। আমরা দেখেছি সেই সময় দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে কত নির্মমভাবে বাংলার মানুষ নির্যাতিত এবং নিষ্পেষিত হয়েছে। চাকরি, ব্যবসা, প্রশাসন—সব ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বৈষম্য ছিল চরম আকারের। ‘বাজেটের ৭৫ শতাংশ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানে, ২৫ শতাংশ ব্যয় হতো পূর্ব পাকিস্তানে, যদিও পূর্ব পাকিস্তান থেকে রাজস্ব আয় ছিল বেশি, শতকরা ৬২ ভাগ। সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল সেনাবাহিনীর সংখ্যা, পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানের সৈন্যের সংখ্যা ছিল ২৫ গুণ বেশি।’ (সূত্র: নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওয়েবসাইট)
২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বর্বর পাকিস্তানি সৈনিকেরা বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় অতর্কিত সশস্ত্র হামলা চালিয়ে পৈশাচিক হত্যালীলায় মেতে ওঠে, অগ্নিসংযোগ লুণ্ঠন আর নারী নির্যাতনের মধ্য দিয়ে সারা দেশে চরম ত্রাস সৃষ্টি করে। দুঃসহ এই জীবন-মরণ সংকটের মুখে বাঙালিকে আত্মরক্ষার তাগিদেই ঘুরে দাঁড়াতে হয়, সত্যিকারের যুদ্ধের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি নিতে হয় এবং মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করার জন্য প্রাণ বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। যুদ্ধবিমুখ নিরস্ত্র বাঙালির ঐক্যবদ্ধ শক্তি, সাহসিকতা ও প্রবল দেশপ্রেমের কাছে আধুনিক যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী পাকিস্তানি সৈন্যের পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাঙালির বিজয়, সার্থক হয় স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
লেখক: ম্যানেজিং ডিরেক্টর, সিগমা লিফট কোম্পানি লিমিটেড