রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের একটি ভবনের পঞ্চম তলায় চালু হয়েছে ৪০ শয্যার একটি আধুনিক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। তবে শর্ত অনুযায়ী ‘এ’ গ্রেডের ফায়ার প্রোটেক্টেড বেড কাম প্যাসেঞ্জার লিফট বসানোর কথা থাকলেও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেখানে বসিয়েছে ‘সি’ গ্রেডের সাধারণ লিফট। অনিয়ম ধরা পড়ায় সেই লিফটটি খুলে নেওয়া হলেও দীর্ঘ ১১ মাসেও নতুন লিফট বসানো হয়নি। ফলে আইসিইউতে ভর্তি মুমূর্ষু রোগী, তাঁদের স্বজন ও চিকিৎসাসেবা সংশ্লিষ্টদের চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এ অবস্থায় দ্রুত লিফট স্থাপনের অনুরোধ জানিয়ে গত ২১ এপ্রিল গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ।
চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১১ মার্চ থেকে রামেক হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গভাবে আইসিইউ চালু রয়েছে। প্রতিদিনই এই ইউনিট রোগীতে পূর্ণ থাকে। গত বছরের মে মাসে সেখানে একটি লিফট বসানো হলেও তা দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী না হওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর আপত্তিতে তা খুলে নেওয়া হয়। পরে জানানো হয়, নতুন লিফট জাপানে তৈরি হচ্ছে এবং ২০২৫ সালের মার্চের মধ্যে তা বসানো হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটি স্থাপন করা হয়নি এবং লিফট স্থাপনের বাস্তব কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না।
গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয়ে এই আইসিইউ নির্মাণের কাজ পায় রাজশাহীর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশন। গত বছরের ৬ মে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, দরপত্রে চাওয়া হয়েছিল ‘এ’ গ্রেডের ফায়ার প্রোটেক্টেড লিফট, কিন্তু সরবরাহ করা হয় ‘সি’ গ্রেডের সাধারণ লিফট। দুই ধরনের লিফটের দামের পার্থক্য প্রায় অর্ধকোটি টাকা।
এ অনিয়মের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে লিফট খুলে নিতে বাধ্য করা হলেও নতুন লিফট আজও বসানো হয়নি। ফলে পাঁচতলায় ওঠানামায় রোগীদের অন্য লিফট ঘুরিয়ে আনতে হচ্ছে, এতে সময়ও লাগছে বেশি। চিকিৎসক, নার্স ও রোগীর স্বজনদেরও এই কারণে প্রতিদিন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
ব্রাদার্স কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ জাকির হোসেন বলেন, নতুন লিফট বসাতে গিয়ে আমার প্রায় ৮০-৯০ লাখ টাকা ক্ষতি হচ্ছে। জাপানে লিফট প্রস্তুত হয়ে গেছে এবং প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দিয়েও জানিয়েছে। তাঁরা পরিদর্শনের প্রস্তাব পাঠালেও মন্ত্রণালয় এখনও প্রতিনিধি মনোনীত করেনি। তাই লিফট আনা যাচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, এর আগে না দেখে লিফট এনে সমস্যায় পড়েছিলাম, এবার না দেখে আনব না। এখন বিষয়টা মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আটকে আছে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি জানি না, সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন।
রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবু হায়াত মুহাম্মদ শাকিউল আজম জানান, লিফট প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ে রয়েছে। জাপানি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের জন্য চিঠি দিয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রতিনিধি গিয়ে লিফট দেখে আসবেন। এরপর শিপমেন্টে প্রায় দেড় মাস সময় লাগবে। তবে অনুমোদন না এলে অনলাইনের মাধ্যমে লিফট পরিদর্শনের চিন্তাও করা হচ্ছে।