একসময় টিভি খুললেই তাকে দেখা যেতো। অভিনয় গুণে হয়ে উঠেছিলেন তুমুল জনপ্রিয়। তবে এখন আর তাকে আগের মতো অভিনয়ে দেখা যায় না। বলছিলাম, নব্বই দশকের জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুমাইয়া শিমু’র কথা। স্বামী, সংসার এবং নিজের প্রতিষ্ঠা করা নারী উন্নয়নমূলক সংগঠন ‘বেটার ফিউচার ফর উইমেন’ ও ‘বেটার ফিউচার কমিউনিকেশন’ নামে একটি যোগাযোগ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নিয়েই এখন তার ব্যস্ততা। মাঝে পড়াশোনা ও পিএইচডি গবেষণার জন্য অভিনয় থেকে একটু বিরতি নিয়েছিলেন। অনেকদিন পর আবারও ফিরলেন শিমু। ফেরার পর কাজ ও সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা হয় এ তারকার সঙ্গে।
একটা সময় টিভি খুললেই আপনাকে দেখা যেতো। এখন দেখা যায়না কেন?
এর আসলে সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই। মাঝে পড়াশোনা শেষ করা, পিএইচডি, বিয়ে তারপর আমার দুটো সংগঠন; সবমিলিয়ে ব্যস্ততা বলা যায়। এরমধ্যে মনোমতো কাজ পেলে হয়তো কিছু কাজ করেছি। আগের মতো নিয়মিত না আর কি। সত্যি বলতে অভিনয়টাই তো ভালো পারি, ওটা ভীষণ মিস করি যখন কাজ করি না। আজকে দর্শকরা যারা আমাকে চেনেন, ভালোবাসেন সেটা কিন্ত অভিনয়ের কারণেই। আমার যারা দর্শক কিংবা ফ্যান, ফলোয়ার্স আছেন তারা সারাক্ষণই অভিযোগ করেন যে, অভিনয় কেন করি না! যেহেতু আমি অভিনয়শিল্পী, আমার মধ্যে তো অভিনয়ের ক্ষুধা রয়েছেই। সবার এত এত আগ্রহ, এবং আমার নিজের ভালো লাগা থেকেই মনে হলো যে আমার মনে হয় অভিনয় থেকে দূরে থাকা ঠিক না, সেজন্যই আবারও কাজ করা।
তাহলে এখন থেকে কী আপনাকে দেখা যাবে?
সেটা এখনই বলতে পারছি না। আগে যেমন অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতাম, এখন হয়তো তেমনটা সম্ভব না তবে যতটুকু পারি, চেষ্টা করবো। দর্শকদের সঙ্গে যেন গ্যাপটা তৈরি না হয়, সেদিকটা খেয়াল রাখবো।
সেটা কীভাবে বা আপনার পরিকল্পনাটা জানতে চাই…
অনেক বেশি না হলেও মোটামুটিভাবে কাজ করবো। এটা যে বিশেষ দিবসকে ঘিরে তা নয়। কারণ, আগে তো শুধু একটাই মাধ্যম ছিলো, টেলিভিশন। এখন কিন্তু অনেক প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে যেমন- ইউটিউব বা ওটিটি। সবমিলিয়ে কিন্তু সারাবছরই ভালো কাজ হচ্ছে। চেষ্টা থাকবে সেসব মাধ্যমে কাজ করার। সহজভাবে বললে, আমি সব মাধ্যমেই কাজ করতে চাই। দর্শকদের বঞ্চিত করতে চাই না। তারা আমাকে দেখতে পাবেন এখন থেকে।
যে সময়টাতে আপনি অনেক ব্যস্ত ছিলেন, এরপর বিরতি নিয়ে এতটা সময় পর আবারও ফেরা। এই সময়ে এসে ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে কোনো পরিবর্তন বা কতটুকু পার্থক্য চোখে পড়ে?
এখন যেহেতু অনেক বেশি কাজ করিনি তাই আমার ধারণাটা একটু কম। যখন আরও অনেক কাজ করবো নিয়মিত, তখন হয়তো এ বিষয়গুলো বুঝতে পারবো বা বলতে পারবো। সময়টাকে তো আমরা অস্বীকার করতে পারি না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই বদলায়। এখন অনেক অনেক প্লাটফর্ম তৈরি হয়েছে যেগুলো বিশ্ব মাধ্যমেও জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কাজের অনেক ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, এটা কিন্তু পজিটিভ দিক। আমি যেহেতু অভিনয়শিল্পী, আমার কাজ অভিনয় দিয়ে দর্শকদের আনন্দিত করা, বিনোদিত করা; আমি সে কাজটাই করতে চাই। অভিনয়ের সব শাখাতেই কাজ করতে চাই। টেলিভিশনে কাজ করার সুবাদে সেখানে তো আমার দর্শক আছেই যারা আমাকে ভালোবাসেন, আমি চাই এখনকার সময়ে নতুন নতুন প্লাটফর্মগুলোর যে দর্শক রয়েছেন তাদের সঙ্গে নিজেকে কানেক্ট করতে। এ কারণে, কাজের মাধ্যমে নিজেকে আপডেটেড রাখতে চাই। এই প্লাটফর্মগুলোতে যে হিউজ একটা দর্শক আছেন, তাদের ভালোবাসাটাও আমি পেতে চাই।
এখনকার প্রজন্মের যারা অভিনয় করছে, তাদের কাজ দেখা হয় কী?
আমি মাঝে মধ্যে দেখার চেষ্টা করি যে কি কাজ হচ্ছে, কেমন হচ্ছে! বোঝার চেষ্টা করি। সুনির্দিষ্ট করে কারও কাজ দেখা হয় না। এখন অনেকেই ভালো কাজ করছে। নতুনদের কাজও দেখার চেষ্টা করি। অনেক সময় ফেসবুকে বা নিউজে নাম শুনি, পরে দেখি যে কেমন কাজ করে! আমার সময়ে যারা অভিনয় করতো তাদের অনেকেই এখনও দাপটের সঙ্গে কাজ করছে, দেখতে কিন্তু ভালোই লাগে। দেখা হয় সবার কাজই।
‘বেটার ফিউচার ফর উইমেন’ ও ‘বেটার ফিউচার কমিউনিকেশন’ নামে আপনার দুটি সংস্থা আছে। সেগুলো কীভাবে মেইনটেইন করেন?
হ্যাঁ, ‘বেটার ফিউচার ফর উইমেন’ নামে আমার একটা ফাউন্ডেশন আছে আর একটা ‘বেটার ফিউচার কমিউনিকেশন’ ফার্ম। এগুলো নিয়ে ব্যস্ততা যদি বলি, আমাদের প্রজেক্ট ভিত্তিক টিম রয়েছে যাদের প্রত্যেককে একেকটা দায়িত্ব দেওয়া আছে। এটা নিয়ে যে সারাক্ষণ আমাকে ব্যস্ত থাকতে হয়, তা নয়। যারা বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন তারা সেগুলো সুন্দরভাবে পালন করছেন, আমি সার্বিকভাবে পর্যবেক্ষণ করি এবং মনিটরিং করি।
১৯৯৯ সালে ‘এখানে আঁতর পাওয়া যায়’ নাটকের মধ্য দিয়ে সুমাইয়া শিমুর টেলিভিশন নাটকে অভিষেক হয়। ‘স্বপ্নচূড়া’, ‘এফএনএফ’, ‘হাউসফুল’ ও ‘ললিতা’ নাটকগুলোতে অভিনয় করে জনপ্রিয়তা পেয়েছিলে তিনি। তার অভিনীত নাটকের তালিকায় আছে ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’, ‘ইডিয়ট’, ‘মন কাঁদে’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসের সরকার’, ‘হ্যালো’, ‘আনন্দ’, ‘সাদা গোলাপ’, ‘শিউলি অথবা রক্তজবার গল্প’, ‘লেক ড্রাইভ লেন’।
২০০৯ সালে ‘স্বপ্নচূড়া’ নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ টিভি অভিনেত্রী হিসেবে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার লাভ করেন তিনি।